1. admin@dailygrambangla24.com : admin :
শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ০৩:২৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
বাগমারায় নদী থেকে এক যুবকের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার মাত্র ৫০০/৬০০ গ্রাম লাকড়ি দিয়ে এক ঘন্টা জ্বলবে  LSC STOVE. এর লাকড়ি চুলা বগুড়ার কাহালুতে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট সহ এক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার সাতক্ষীরা মেডিকেলে ওয়ার্ড বয়ের কাণ্ড : ডাস্টবিন থেকে ওষুধ তুলে রোগীর কাছে বিক্রি ! প্রাইভেট ছাত্রীকে ধর্ষণের অপরাধে ধর্ষক শিক্ষক গ্রেফতার পোরশায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মশিদপুর ইউনিয়নের কমিটি গঠন বগুড়ায় ঈদের দিন সকালে বাবা-ছেলে নিহতের ঘটনায় বাস চালক গ্রেপ্তার সাতক্ষীরায়  মোটরযানের উপর মোবাইল কোর্ট বাগমারায় দুটি পুকুরে বিষ দিয়ে ১২ লাখ টাকার মাছ নিধন বাগমারার করখন্ড মাদ্রাসায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ঈদ পুনর্মিলনী

স্বাস্থ্যসেবার আলো প্রান্তিক জনপদে, গোদাগাড়ীতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

গোদাগাড়ী প্রতিবেদক:
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫
  • ১১৫ বার পঠিত

 

গোদাগাড়ী প্রতিবেদক:

একজন বৃদ্ধা নারীর মুখে প্রশান্তির ছাপ। হাতে চিকিৎসকের দেওয়া পরামর্শপত্র, পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর ছোট্ট নাতনি। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ৪ নম্বর রিশিকুল ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে রবিবার সকালে এমন বহু চিত্র দেখা যায়। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় এক ব্যতিক্রমী মানবিক আয়োজন, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প।

শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্টুডেন্ট স্কয়ার ট্রাস্ট এ আয়োজনের উদ্যোগ নেয়। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পেতে সকাল থেকেই নানা বয়সী নারী-পুরুষ ভিড় করতে থাকেন ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে। কেউ এসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে, কেউ পায়ে হেঁটে পাশের গ্রাম থেকে। সবার চোখে একটিই আকাঙ্ক্ষা—একবার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রোগের কথা বলা, একটি প্রয়োজনীয় ওষুধের পরামর্শ পাওয়া।

সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলা এ ক্যাম্পে অংশ নেন ঢাকা ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবীরা। ক্যাম্পে মেডিসিন, গাইনী ও সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ছিল ব্লাড গ্রুপ নির্ণয়, ডায়াবেটিস পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা।

চিকিৎসাসেবা নিতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা রেবেকা বেগম বলেন, “আমাদের এই ইউনিয়নে এর আগে কখনো মেডিকেল ক্যাম্প পাইনি। আমি এর আগে টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারিনি। আর আমাদের এখান থেকে মেডিকেল যেতে হলে অনেক টাকা যাতায়াত খরচ লাগে। আবার ডাক্তারের ফী লাগে। আর এখানে কাছে হওয়ায় আমি আমার স্বামী, শাশুড়ী, ননদ বিনা টাকায় চিকিৎসা পেয়েছি। যা আমাদের পরিবারের জন্য ভালো হয়েছে।

এমন মানবিক উদ্যোগের পেছনে রয়েছে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সংগঠক, যারা সময়ের চেয়ে দায়িত্বকে বড় করে দেখেন। ক্যাম্পে সেবা দিয়েছেন—জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের রেসিডেন্ট চিকিৎসক ও ট্রাস্টের উপদেষ্টা ডা. মো. আবু রায়হান নাঈম, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. জোহরা খাতুন সাথী, শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মিনহাজুল ইসলাম। এছাড়াও চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন ডা. ফাহিম ফয়সাল, ডা. শহিদুজ্জামান কায়সার ও ডা. ওয়াশিউর রহমান অমিও।

ডা. আবু রায়হান বলেন, “শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্টুডেন্ট স্কয়ার ট্রাস্ট ২০১২ সাল থেকে কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই মেডিকেল ক্যাম্প। ক্যাম্পের উদ্দেশ্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ। আমাদের এখানে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার পাশাপাশি অর্গানাইজাড ট্র্যাকিং সিস্টেম আছে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে যে সব রোগীদের দীর্ঘস্থায়ী পর্যবেক্ষণ দরকার তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করা হবে।”

ক্যাম্পে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও, যারা চিকিৎসকদের সহায়তায় সেবার পরিধি বাড়িয়ে তুলেছিলেন।

রিশিকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মাহাবুবুর রহমান বলেন, “আমার রিশিকুল ইউনিয়নটি একটি প্রত্যন্ত ও প্রান্তিক এলাকা। এমন একটি জায়গায় এত বড় একটি মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন করায় আমি স্টুডেন্ট স্কয়ার ট্রাস্টের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। ঈদুল আজহার পরের দিন, আমাদের মায়েদের জন্য গাইনী, মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে এই ব্যতিক্রমী সেবা কার্যক্রম চালু করা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমাদের এলাকার সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক মানুষের জন্য এ আয়োজন আশীর্বাদস্বরূপ।”

তিনি আরও বলেন, “সাধারণভাবে একটি চিকিৎসা সেবা নিতে গেলে একজন রোগীকে কমপক্ষে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা ফি দিতে হয়। অথচ, এই ক্যাম্পে সেই অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছ থেকেই আমার ইউনিয়নের মানুষ ফ্রিতে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, এই ক্যাম্পের মাধ্যমে বিশেষ করে গরিব মানুষ, আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী শিশুরা সরাসরি উপকৃত হবে। এর আগে রিশিকুল ইউনিয়নে এত বড় পরিসরে কোনো মেডিকেল ক্যাম্প কখনো হয়নি—এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য বড় পাওয়া।”

স্টুডেন্ট স্কয়ার ট্রাস্টের সম্মানিত উপদেষ্টা মরিয়ম সরকার বলেন, “এই এলাকাটিতে প্রান্তিক ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস। অনেকেই চিকিৎসা খরচ বহন করতে পারেন না। আমরা চাই, তাঁদের জন্য নিয়মিত সেবা নিশ্চিত করতে।”

ট্রাস্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবিষ্যতে গোদাগাড়ীর বিভিন্ন ইউনিয়ন ও আশপাশের উপজেলাগুলোতে এমন আরও মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নয়, বরং স্বাস্থ্যসচেতনতা এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি কার্যকর নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাই তাঁদের লক্ষ্য।

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প মানে কেবল কয়েক ঘণ্টার একটি আয়োজন নয়। এটি হলো বিশ্বাস তৈরির পথ, সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার একটি রূপ। প্রান্তিক মানুষের জীবনে একটু স্বস্তি ফিরিয়ে আনার নাম—মেডিকেল ক্যাম্প।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর