” মামার বাড়ি ঝড়ের দিনে”
এইচ, এম, মোবারক
” মামার বাড়ি ঝড়ের দিনে আম কুড়াতে সুখ,
পাকা জামের মধুর রসে রঙ্গিন করে মুখ”
কবিতার লাইন দুটি শুনতে ও বলতে খুবই মধুর লাগে কিন্তু লাগলে কি হবে, সেই দিন কি আর আছে গো ভাই? রথীন্দ্রনাথের সুরে যখন মাইক থেকে বেরিয়ে আসতো আমি কি তোর আপন ছিলাম না—–রে জরিনা, ছোট্ট বেলা গাছ তলাতে, পুতুল খেলার ছলনাতে আম কুড়াতে যাইতাম দুই জনা—- রে জরিনা।
বলি তখন ছিল ফল আল্লাহর নেয়ামত, প্রকৃতির দান। সে সময় ধণী গরীব নির্বিশেষে সকলেই আম খেতে পারতো, প্রাণী কুল পক্ষিকুল সবাই। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনা আম্রবনের ছায়ায় বাস গৃহকে করে রেখেছিল যেন শ্যামলের সিংহাসন। আমের মৌসুম এলে মুকুলে মুকুলে ভরে উঠতো গাছ। মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে আকুল হয়ে ছুটে আসতো অসংখ্য মৌমাছি ও কীটপতঙ্গের দল। আম পাকতে শুরু হলেই স্কুল ছুটি হতো দীর্ঘ দিনের সেই আনন্দ যেন আর শেষ হবার নয়।মামা বাড়ি বেড়াতে যেতাম মধু মাষ জৈষ্ঠের আম খাবার জন্যে। আর এমন সময় যদি কালবৈশাখীর দেখা পাওয়া যায় তাহলে তো আর কোন কথাই নেই। কবি লেখকেরা ও যেন থেমে থাকেনি, কবিতার ভাষায় আর গানের সুরে যেন আম এরই রস উপভোগ করেছেন তাঁরা। আত্মীয় কিংবা অনাত্মীয় কার বাড়িতে আম নেই বলো ? খাঁচি অথবা ব্যাগে করে মামা বাড়ি, খালা,ফুপু সকলেই সকলের বাড়িতে আম পাঠায়- যেন আমের ই মেলা বসে গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে। এ সময় ধনী গরীব কিংবা কুড়ানির দল কেহই বাদ পড়েনা এই আম্র মেলা থেকে।
কিন্তু আজ সেই আমের কথা, আম কুড়ানোর কথা, মামা- খালার বাড়িতে আম পাঠানোর কথা ভাবছেন ? না কারো কাছ থেকে পাওয়ার আশায় রয়েছেন? যেন কোনটায় হবার নয় গো ভাই!
দেখা গেছে আম বাগানে লাঠিয়াল বসানো হয়েছে মাসিক বেতনে। যেন ” দুই বিঘা জমির ” উপেন আর জমিদার। ছিড়ে খাওয়া তো দুরের কথা, ঝড়ে পড়লে তা কুড়িয়ে খাবার যেন কোন উপায় নেই। তবে হ্যাঁ যদি কারও চামড়া আবার খুব শক্ত হয় তো সে কথা আবার একটু ভিন্ন।
আজ সবাই আমরা যেন ভাবতে শুরু করেছি কি ভাবে কোন বাগান থেকে কত টাকা আয় করা যায়। আমার বাগানের সব কিছুর হকদার যেন আমি নিজে। তাছাড়া নিজের চাহিদা পুরন না হলে তো আর অন্যকে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। এভাবে আম হয়ে উঠেছে এখন আয়ের উৎস। তাই বাগানে মুকুল ফোটার আগেই অগ্রীম অর্থ প্রদানের লোভ দেখিয়ে বাগান মালিককে বোকা বানিয়ে ফেলছে , জুস কোম্পানি আর আম ব্যাবসায়ীরা। এভাবে একটি বাগান প্রতি মৌসুমে কয়েকবার হাত বদল হতে হতে এমন অবস্থায় গিয়ে পৌঁছায় যে, এর মধ্যে আম কুড়ানো আর পাকা জামের মধুর রস শুধু কল্পনাই থেকে যায়। জুস কোম্পানির হাতে পড়লে তো আর আম পাকার কোন দরকার হয়না ওদের দরকার শুধু গন্ধটা।
রথীন্দ্রনাথের ছোট বেলা আর আমার ছোট বেলার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই , কিন্তু পার্থক্য হলো তখন মধু মাসের কোন ফলই যেমনঃ আম,জাম,কাঁঠাল ,লিচু এগুলোর কোনটাই বাজারে দাড়ি পাল্লায় মেপে বিক্রি করার দৃশ্য চোখে পড়েনি। আর এখন তো বাজারে নিয়ে যাওয়ার দরকার হচ্ছেনা, মুকুলেই শেষ।
তা হলে আজ আমাদের আমের ছুটিতে যাদের নিজের কোন গাছ নেই, তাদের এসকল ফল বড় জোর চাখা হতে পারে খাওয়ার সৌভাগ্য ও তৃপ্তি যেন অপূর্নই থেকে যায়। জিহব্বার খালি চট্কানি ছাড়া আর কি উপায় বলো?