গ্রামবাংলা ডেক্স নিউজ :
এবার নওগাঁয় সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই চামড়া ক্রয়-বিক্রয় করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই চামড়া সংরক্ষণ করছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। এবার নওগাঁয় প্রকার ভেদে গরুর চামড়া ৩-৭শত টাকা দরে বিক্রি হলেও ছাগলের চামড়া কিনে লোকসান গুনছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে সঠিক নিয়মে চামড়া সংরক্ষন করার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ৭৪টন লবণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। তাই এবার নওগাঁয় চামড়া নষ্ট হয়নি এবং ৫-৬কোটি টাকা মূল্যের বাণিজ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।
সূত্রে জানা এবার কোরবানীর ইদে নওগাঁয় ৩লাখ ৭৮হাজার গবাদিপশু জবাই করা হয়েছে যার মধ্যে সিংহভাগই হচ্ছে গরু। তবে এবার গরুর ল্যাম্পিস্কিন রোগে আক্রান্ত চামড়াগুলোর দাম একেবারেই নেই। এছাড়া গরুর চামড়ার দাম মিললেও প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ছাগলের চামড়ার দাম নেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন শ্রমিক সংকট ও লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ছোট ছোট চামড়া সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। অপরদিকে কোম্পানিগুলোও ছোট ছোট চামড়াগুলো নিতে অনিহা প্রকাশ করে যার কারণে ছাগলের চামড়ার চাহিদা একেবারে না থাকার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি। এবার নওগাঁয় ছাগলের চামড়া প্রকার ভেদে ১০-২শত টাকা মূল্য পর্যন্ত ক্রয় করা হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে এবার সরকারের নির্ধারণ করা মূল্য অনুসারে সকল চামড়া ক্রয় করার ঘোষণা হওয়ায় লাভের আশায় গ্রামগঞ্জ থেকে একটু বেশি দামে চামড়া কিনে লোকসান গুনছেন মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা। এদিকে একটি চামড়াও যেন নষ্ট না হয় সেই লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো সরকারের পক্ষ থেকে নওগাঁর ১১টি উপজেলার বড় বড় বিভিন্ন মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিগুলোতে ৭৪টন লবণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে যাতে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাপ্ত চামড়াগুলো পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সহজেই সংরক্ষণ করা যায়। তবে দীর্ঘদিন যাবত ধরে চামড়া নেওয়ার পর কোম্পানিরা ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা সঠিক ভাবে পরিশোধ করে না। তাই শুধু ইদুল আজাহাতেই নয় সারা বছরই একটি কমিটির মাধ্যমে চামড়া শিল্পকে মনিটরিং করার অনুরোধ জানিয়েছেন নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা।
জেলার রাণীনগর উপজেলার ফড়িয়া চামড়া ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান ভেবেছিলাম এবার চামড়া কিনে একটু লাভের মুখ দেখবো। কিন্তু প্রতিবছরের ন্যায় এবারোও লোকসান গুনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে গেলে ত্রুটির শেষ নেই। তাই লোকসান দিয়েই চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। আর ছাগলের চামড়ার তো কোন দামই নেই। তবে এবার চামড়া নিয়ে মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম বন্ধ হয়েছে।
নওগাঁ চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন তারা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই চামড়া ক্রয় করেছেন। তবে এবার শতকরা ২০-৩০ভাগ ল্যাম্পিস্কিন রোগে আক্রান্ত গরু জবাই করা হয়েছে। ফলে দাগ পড়া সেই চামড়াগুলো ফিট হিসেবে নয় কেজি হিসেবে কোম্পানিরা তাদের কাছ থেকে গড় মূল্যে ক্রয় করবে তাই তারাও সেই চামড়াগুলো কম দামে কিনতে বাধ্য হয়েছেন। তবে সরকারি ভাবে বিনামূল্যে লবণগুলো যদি আদি চামড়া ব্যবসায়ীদের মাঝে দেয়া হতো তাহলে যে পরিমাণ চামড়া এবার নষ্ট হয়েছে তাও নষ্ট হতো না। যেসব প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে লবণ দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই জানে না কিভাবে চামড়া সংরক্ষণ করতে হয়। তাই তারা সেই লবণগুলো খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে।
নওগাঁ চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি মো: মমতাজ হোসেন বলেন এবার নওগাঁতে ৫-৬কোটি টাকা মূল্যের চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। যদি কোম্পানিগুলো নগদ মূল্যে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া ক্রয় করে তাহলেই মঙ্গল। তবে ট্যানারী মালিকদের উপর নির্ভরশীল না হয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সারা বছরই যদি একটি কমিটির মাধ্যমে চামড়া শিল্পকে তদারকি করা হয় এবং চামড়া শিল্পে যে দুর্নীতি আর অনিয়মের সিন্ডিকেট আছে সেগুলো ভেঙ্গে দেয়া যায় তাহলে ধীরে ধীরে আবার চামড়া শিল্পের যৌবন ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন এই চামড়া ব্যবসায়ী।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন নওগাঁয় চামড়া ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে যেন কোন প্রকারের অরাজকতার সৃষ্টি না হয় এবং সরকারের পক্ষ থেকে প্রদান করা লবণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইদেও আগেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একাধিক সভা করা হয়েছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে চামড়া নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেও প্রচার-প্রচারণার চালানো হয়েছে। তাই এবার জেলায় চামড়া সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারের গৃহিত পদক্ষেপগুলো মাঠ পর্যায়ে সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করায় দেশের জাতীয় সম্পদ চামড়া তেমন একটা নষ্ট হয়নি। এছাড়া প্রথমবারের মতো এবার সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে লবণ বিতরণ করায় মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম বন্ধ হয়েছে। এছাড়া নওগাঁ জেলা ভারতের সীমান্তবর্তি হওয়াই এক ইঞ্চি চামড়াও যেন পাচার না হতে পারে সেই বিষয়টি কঠোর ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। ফলে এবার নওগাঁয় সুষ্ঠ ভাবে চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।